মেক্সিকো সীমান্তে নতুন দেয়ালের অনুমোদন, তোপের মুখে ট্রাম্প
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আবারও সমালোচনার মুখে পড়েছেন মেক্সিকো সীমান্তে নতুন করে দেয়াল নির্মাণের অনুমোদন দেওয়ায়। অভিবাসন ঠেকাতে নেওয়া এ পদক্ষেপটি মার্কিন অভ্যন্তরীণ নীতির অংশ হলেও, প্রতিবেশী দেশ মেক্সিকোর সরকার এটিকে ‘একতরফা’ এবং ‘অগ্রহণযোগ্য’ বলে কড়া সমালোচনা করেছে।
মেক্সিকোর বর্তমান প্রেসিডেন্ট ক্লউদিয়া শেইনবাউম সরাসরি এই প্রকল্পের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। নিউ মেক্সিকো রাজ্যের সীমান্তবর্তী এলাকায় নতুন দেয়াল নির্মাণকে তিনি সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাখ্যান করে বলেছেন, “মেক্সিকো এই প্রকল্পে কোনোভাবেই জড়িত নয়, এমনকি এক টাকাও অর্থায়ন করছে না।” তিনি জোর দিয়ে বলেন, “আমরা দেয়ালের নীতিতে বিশ্বাস করি না। আমরা বিশ্বাস করি পারস্পরিক সহযোগিতা, সম্মান এবং সমন্বয়ের মাধ্যমে একটি নিরাপদ ও মানবিক সীমান্ত ব্যবস্থা গড়ে তোলা সম্ভব।”
এই প্রসঙ্গে এক সংবাদ সম্মেলনে শেইনবাউম আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের এমন পদক্ষেপ মেক্সিকোর সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ ও কূটনৈতিক সম্পর্কের পরিপন্থী। সীমান্ত নিরাপত্তা কেবলমাত্র দেয়াল নির্মাণের মাধ্যমে অর্জন সম্ভব নয়, বরং দরকার উন্নয়ন-ভিত্তিক পারস্পরিক সহযোগিতা। তিনি আরও উল্লেখ করেন, “আমরা যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী মেক্সিকানদের অধিকার, মর্যাদা ও অবদানের প্রতি সম্মান চাই। দেয়াল নয়, চাই সম্মান ও সমঝোতা।”
সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিউ মেক্সিকোর সান্তা তেরেসা ও মেক্সিকোর সিউদাদ জুয়ারেজ শহরের মধ্যবর্তী সীমান্ত এলাকায় একটি নতুন সীমান্ত দেয়ালের নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে। প্রকল্পটির আওতায় ৯.৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং ৯ মিটার (প্রায় ৩০ ফুট) উঁচু নতুন দেয়াল নির্মাণ করা হচ্ছে, যা একটি পুরোনো ৫.৫ মিটার উঁচু দেয়ালের ঠিক পেছনে বসানো হচ্ছে।
এই প্রকল্পটি মূলত ট্রাম্প প্রশাসনের ২০১6 সালের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি “বর্ডার ওয়াল” নীতির অংশ হিসেবে পুনরায় বাস্তবায়নের উদ্যোগ হিসেবে দেখা হচ্ছে। যদিও তার মেয়াদ শেষে প্রকল্পের গতি অনেকটা শ্লথ হয়ে গিয়েছিল, সাম্প্রতিক কার্যক্রমে এর নতুন করে তৎপরতা দেখা যাচ্ছে। তবে এর বিরোধিতায় মেক্সিকোর সরকার ছাড়াও মানবাধিকার সংগঠনগুলো, অভিবাসী অধিকারকর্মী এবং সীমান্ত অঞ্চলের অনেক বাসিন্দাও মুখ খুলেছেন।
এই পরিস্থিতি যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সম্পর্কের ক্ষেত্রে নতুন উত্তেজনার সৃষ্টি করেছে। দুই দেশের কূটনৈতিক মহলে এই প্রকল্পের ভবিষ্যৎ প্রভাব নিয়ে গভীর উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নিরাপত্তা ও অভিবাসন নীতির নামে এমন পদক্ষেপ বাস্তবিক অর্থে সম্পর্ককে দুর্বল করে তুলতে পারে এবং অভিবাসী জনগোষ্ঠীর ওপর আরও চাপ সৃষ্টি করতে পারে।
দেয়াল নির্মাণকে ঘিরে ট্রাম্প প্রশাসনের একক সিদ্ধান্ত, মেক্সিকোর প্রতিবাদ এবং আন্তর্জাতিক সমালোচনা—সব মিলিয়ে সীমান্ত রাজনীতিতে আবারও উত্তেজনার সঞ্চার হয়েছে, যা আগামী দিনগুলোতে দুই দেশের সম্পর্ক এবং অভিবাসন নীতিতে বড় প্রভাব ফেলতে পারে।