পৃথিবীর ইতিহাসে প্রথম হত্যাকাণ্ডটি সংঘটিত হয়েছিল আদম (আ.)-এর যুগে। হাবিল-কাবিল নামক দুই ভাই আল্লাহর নামে কোরবানি করেছিল। কিন্তু আল্লাহ একজনের কোরবানি কবুল করে, অন্যজনেরটি করেননি। তাতে খেপে গিয়ে একজন অন্যজনকে হত্যা করে, যার কোরবানি কবুল হয়েছিল।
তাফসিরে কুরতুবির বিবরণ মতে, হাবিলের কোরবানি মহান আল্লাহর দরবারে কবুল হওয়ায় কাবিল তার ওপর ভীষণ ক্ষিপ্ত হয়েছিল, এমনকি সে তাকে হত্যার হুমকি দিয়েছিল। কিন্তু হাবিল তার ভাইয়ের হুমকির জবাবে বলেছিল, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তাকওয়াশীল বান্দাদের থেকে (কোরবানি) কবুল করে থাকেন। এক্ষণে যদি তুমি আমাকে হত্যা করতে উদ্যত হও, তবে আমি তোমাকে পাল্টা হত্যা করতে উদ্যত হব না। কেননা আমি বিশ্বচরাচরের পালনকর্তা আল্লাহকে ভয় করি।’ (সুরা : মায়িদা, আয়াত : ২৭-২৮)
কিন্তু এতে কাবিলের ক্ষোভ কমেনি। সে সুযোগের অপেক্ষায় ছিল। এবং সুযোগ বুঝে তার ভাই হাবিলকে নৃশৃংসভাবে হত্যা করে। ইবনে মাসউদ (রা.)-এর মতে, কাবিল হাবিলকে ঘুমন্ত অবস্থায় পেয়েছিল।
সে সুযোগে সে তার মাথায় পাথর দিয়ে আঘাত করে মাথা থেঁতলে তাকে হত্যা করে। (তাফসিরে কুরতুবি)
তার মাধ্যমেই পৃথিবীতে শুরু হয় রক্তপাতের সংস্কৃতি। যার ধারা আজও অব্যাহত রয়েছে।
অথচ পৃথিবীর বুকে সবচেয়ে জঘন্য অপরাধের একটি হলো অন্যায়ভাবে কোনো নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করা। ইসলামের দৃষ্টিতে অন্যায়ভাবে কোনো নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করা গোটা মানবতাকে হত্যা করার মতো।
পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে,
مِنۡ اَجۡلِ ذٰلِكَ ۚۛؔ كَتَبۡنَا عَلٰی بَنِیۡۤ اِسۡرَآءِیۡلَ اَنَّهٗ مَنۡ قَتَلَ نَفۡسًۢا بِغَیۡرِ نَفۡسٍ اَوۡ فَسَادٍ فِی الۡاَرۡضِ فَكَاَنَّمَا قَتَلَ النَّاسَ جَمِیۡعًا ؕ وَ مَنۡ اَحۡیَاهَا فَكَاَنَّمَاۤ اَحۡیَا النَّاسَ جَمِیۡعًا ؕ وَ لَقَدۡ جَآءَتۡهُمۡ رُسُلُنَا بِالۡبَیِّنٰتِ ۫ ثُمَّ اِنَّ كَثِیۡرًا مِّنۡهُمۡ بَعۡدَ ذٰلِكَ فِی الۡاَرۡضِ لَمُسۡرِفُوۡنَ
‘এ কারণেই আমি বনী ইসরাঈলের ওপর এই হুকুম দিলাম যে, যে ব্যক্তি কাউকে হত্যা করা কিংবা জমিনে ফাসাদ সৃষ্টি করা ছাড়া যে কাউকে হত্যা করল, সে যেন সব মানুষকে হত্যা করল। আর যে তাকে বাঁচাল, সে যেন সব মানুষকে বাঁচাল। আর অবশ্যই তাদের নিকট আমার রাসুলগণ সুস্পষ্ট নিদর্শনসমূহ নিয়ে এসেছে। তা সত্ত্বেও এরপর জমিনে তাদের অনেকে অবশ্যই সীমালঙ্ঘনকারী। (সুরা : মায়িদা, আয়াত : ৩২)
এটা আল্লাহর বেঁধে দেওয়া সীমা। শরিয়ত সমর্থিত কোনো উপযুক্ত কারণ ছাড়া মানুষ হত্যা করা হারাম। মহান আল্লাহ অন্যায়ভাবে মানুষ হত্যাকে হারাম করেছেন। আল্লাহর দরবারে একজন নিরপরাধ মানুূষের প্রাণের মূল্য গোটা পৃথিবীর চেয়েও বেশি। আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন,
لَزَوَالُ الدُّنْيَا أَهْوَنُ عَلَى اللَّهِ مِنْ قَتْلِ رَجُلٍ مُسْلِمٍ
আল্লাহর নিকট পৃথিবী ধ্বংস হওয়াটা অধিকতর সহজ ব্যাপার একজন মুসলমান খুন হওয়ার পরিবর্তে। (তিরমিজি, হাদিস : ১৩৯৫)
অর্থাৎ একজন নিরপরাধ মুমিনকে হত্যা করা আল্লাহর কাছে গোটা পৃথিবী ধ্বংস হওয়ার চেয়ে গুরুতর ঘটনা।
তাই তো পরকালে এর শাস্তিও হবে অত্যন্ত যন্ত্রণাদায়ক। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে,
وَمَنۡ یَّقۡتُلۡ مُؤۡمِنًا مُّتَعَمِّدًا فَجَزَآؤُهٗ جَهَنَّمُ خٰلِدًا فِیۡهَا وَ غَضِبَ اللّٰهُ عَلَیۡهِ وَ لَعَنَهٗ وَ اَعَدَّ لَهٗ عَذَابًا عَظِیۡمًا
‘আর যে ইচ্ছাকৃত কোনো মুমিনকে হত্যা করবে, তার প্রতিদান হচ্ছে জাহান্নাম, সেখানে সে স্থায়ী হবে। আর আল্লাহ তার ওপর ক্রুদ্ধ হবেন, তাকে অভিশাপ করবেন এবং তার জন্য বিশাল আজাব প্রস্তুত করে রাখবেন।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ৯৩)
নাউজুবিল্লাহ। এর চেয়ে বড় ভয়াবহ বিষয় আর কী হতে পারে যে একটি ভুলের কারণে তার পরকাল ধ্বংস হয়ে যাবে! তাকে মহান আল্লাহর দরবারে অভিশপ্ত হয়ে অনন্তকাল কঠিন থেকে কঠিন আজাবের সম্মুখীন হতে হবে।মহান আল্লাহ সবাইকে এ ধরনের আগ্রাসী মনোভাব থেকে বের হয়ে আসার তাওফিক দান করুন।