বিএনপি জুলাই সনদের সাংবিধানিক স্বীকৃতির বিপক্ষে, রাজনৈতিক জটিলতার আশঙ্কা
জুলাই জাতীয় সনদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেওয়ার বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে বিএনপি। দলটির অভিমত, এমন স্বীকৃতি রাজনৈতিকভাবে জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে এবং ভবিষ্যতে বিতর্কের জন্ম দিতে পারে। সোমবার রাতে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বৈঠকে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে সভাপতিত্ব করেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
বৈঠকে অংশ নেওয়া নেতারা মনে করেন, যদি সনদটি সাংবিধানিক স্বীকৃতি পায়, তবে কিছু দল এটিকে “দ্বিতীয় স্বাধীনতা” হিসেবে প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করতে পারে, যা ইতিহাস বিকৃতির আশঙ্কা বাড়াবে। এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “জুলাইয়ে জনগণের অভ্যুত্থান ঘটেছিল, তবে সেটি দেশের দ্বিতীয় স্বাধীনতা নয়। এটি ছিল একটি স্বৈরাচারের পতন।”
বিএনপির মতে, সনদে অন্তর্ভুক্ত সংস্কার প্রস্তাব বা সুপারিশগুলো পরবর্তী নির্বাচনে নির্বাচিত সরকার দুই বছরের মধ্যে বাস্তবায়ন করতে পারে। দলটি তাই এই সনদের অধিকাংশ ধারা নিয়ে একমত থাকলেও, ৭ নম্বর ধারায় থাকা সাংবিধানিক স্বীকৃতির অংশে দ্বিমত পোষণ করেছে।
অন্যদিকে, জুলাই ঘোষণাপত্র সম্পর্কেও বিএনপি সতর্ক অবস্থান নিয়েছে। দলটির অভিমত, একে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দিলে ১৯৯০-এর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন কিংবা ভবিষ্যতের যেকোনো গণ-অভ্যুত্থানের ক্ষেত্রেও একই দাবি উঠবে, যা দেশের রাজনৈতিক কাঠামোয় জটিলতা তৈরি করবে। একাত্তরের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র ২০১১ সালে সংবিধানে যুক্ত হলেও সেটি এখনো আদালতে চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছে—এই দৃষ্টান্ত তুলে ধরে বিএনপি বলেছে, জুলাই ঘোষণাপত্রকে রাষ্ট্রীয় আর্কাইভে সংরক্ষণ করাই যথেষ্ট।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, “জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র নিয়ে আলোচনা হয়েছে। কিছু সংশোধনী দিয়ে সরকারের কাছে প্রেরণ করা হয়েছে। বিশেষ কোনো দ্বিমত নেই।” তবে দলীয় সূত্র জানায়, ঘোষণাপত্রের আলোচনা বন্ধ রাখতে চায় বিএনপি, তবে সনদ নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যাবে।
প্রসঙ্গত, ২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থানের পর থেকে জুলাই ঘোষণাপত্র প্রণয়নের প্রক্রিয়া চলছে। যদিও একাধিক দল এ নিয়ে ভিন্নমত প্রকাশ করেছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছাত্রনেতারা দ্রুত ঘোষণাপত্র চাইলেও বিএনপি শুরু থেকেই এর যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল। সরকার পরবর্তীতে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে একটি খসড়া পাঠায়। বিএনপি তাতে নিজের মতামত ও সংশোধনী যুক্ত করে ফেরত দেয়। এরপর এনসিপির আন্দোলনের চাপে সরকার এ প্রক্রিয়া আবার গতিশীল করে।
চূড়ান্ত খসড়ায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে যে, অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারকে স্বীকৃতি দেওয়া হবে এবং সুষ্ঠু নির্বাচন, গুম-খুন ও দুর্নীতির বিচার নিশ্চিত করার অঙ্গীকার রাখা হয়েছে। এছাড়া সংবিধান বাতিল নয়, বরং মানবাধিকার রক্ষায় তা সংস্কারের কথা বলা হয়েছে।
বিএনপি জানায়, তারা পুরো ঘোষণাপত্র নয়, শুধু একটি অনুচ্ছেদ ও তার উল্লেখ চায় সংবিধানের চতুর্থ তফসিলে। দলের পক্ষ থেকে ঘোষণাপত্রের ভাষাগত সংশোধনসহ ২৬ মার্চের মহান স্বাধীনতার ঘোষণার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। খুব শিগগিরই সনদ ও ঘোষণাপত্রের সংশোধিত খসড়া সরকারকে হস্তান্তর করা হবে বলে জানিয়েছে দলটি।