থাইল্যান্ড-কম্বোডিয়া সংঘর্ষে হস্তক্ষেপ, যুদ্ধ থামাতে হুঁশিয়ারি দিলেন ট্রাম্প
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দুই প্রতিবেশী দেশ থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার সীমান্তে চলমান সংঘর্ষে প্রাণহানি ও বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। এমন উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে এবার সরাসরি হস্তক্ষেপ করলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। স্কটল্যান্ড সফরে থাকা অবস্থায় ট্রাম্প দুই দেশের নেতার সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেন এবং হুঁশিয়ারি দেন—যদি সংঘর্ষ বন্ধ না হয়, তাহলে যুক্তরাষ্ট্র দুই দেশের সঙ্গে বাণিজ্য বন্ধ করে দেবে।
রয়টার্সের বরাতে জানা যায়, ট্রাম্পের হুঁশিয়ারির পরপরই দুই দেশ আলোচনায় বসতে সম্মত হয় এবং তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতির লক্ষ্যে প্রস্তুতি শুরু করে। দীর্ঘদিনের সীমান্ত বিরোধ ও ঐতিহাসিক প্রেয়াহ ভিহেয়ার মন্দির ঘিরে চলমান উত্তেজনার মধ্যেও এবার কিছুটা আশার আলো দেখা যাচ্ছে।
২৬ জুলাই (শনিবার) ট্রাম্প সামাজিক মাধ্যমে জানান, থাই ও কম্বোডিয়ান প্রধানমন্ত্রী শান্তিপূর্ণ আলোচনায় রাজি হয়েছেন। তিনি স্কটল্যান্ডে অবস্থানকালে সরাসরি উভয় নেতার সঙ্গে কথা বলেন এবং স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেন—যুদ্ধ থামাতে না পারলে যুক্তরাষ্ট্র আর বাণিজ্য করবে না।
থাইল্যান্ডের ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী ফুমথাম ওয়েচায়াচাই ফেসবুকে এক পোস্টে ট্রাম্পকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, “আমরা যুদ্ধবিরতির পক্ষে; তবে কম্বোডিয়ার পক্ষ থেকেও আন্তরিকতা প্রত্যাশা করি।”
তবে, দুই দেশের মধ্যে আলোচনার দিন-তারিখ বা স্থান এখনও নির্ধারিত হয়নি। হোয়াইট হাউস, থাইল্যান্ড কিংবা কম্বোডিয়ার পক্ষ থেকেও আনুষ্ঠানিক কোনো বিবৃতি আসেনি।
অন্যদিকে, সংঘর্ষ এখনো থামেনি। শনিবারও থাইল্যান্ডের ত্রাট ও কম্বোডিয়ার পুরসাত প্রদেশে গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। আগের যুদ্ধক্ষেত্র থেকে প্রায় ১০০ কিলোমিটার দূরে নতুন করে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে, যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে।
দুই দেশই একে অপরকে সংঘর্ষের জন্য দায়ী করছে। থাইল্যান্ডের দাবি, মে মাসে এক কম্বোডিয়ান সৈন্য নিহত হওয়ার পর থেকেই উত্তেজনা বেড়েছে। দেশটির সেনাবাহিনী জানিয়েছে, সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত তাদের ৭ সেনা ও ১৩ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন। কম্বোডিয়ার হিসাব অনুযায়ী, তারা হারিয়েছে ১৩ জন, যাদের মধ্যে ৫ জন ছিলেন সামরিক সদস্য।
জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এ সংঘর্ষকে ‘অপ্রয়োজনীয় প্রাণহানি’ বলে উল্লেখ করে দ্রুত যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছেন। নিরাপত্তা পরিষদের এক বৈঠকে থাইল্যান্ড অভিযোগ করেছে, সীমান্তে নতুনভাবে স্থাপন করা মাইন বিস্ফোরণে তাদের সেনা আহত হয়েছে। তবে কম্বোডিয়া এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে, থাইল্যান্ড ইচ্ছাকৃতভাবে হামলা চালাচ্ছে।
ট্রাম্প জানিয়েছেন, আগামী ১ আগস্টের মধ্যে তিনি দুই দেশের সঙ্গে আলাদা বাণিজ্যচুক্তি সম্পন্ন করতে চান। তবে আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকদের মতে, শান্তি প্রতিষ্ঠায় কূটনৈতিক চেষ্টার পাশাপাশি বাণিজ্যকে চাপ হিসেবে ব্যবহার করলে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠতে পারে।
এদিকে, আসিয়ান গোষ্ঠীর চেয়ারম্যান এবং মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম একটি পৃথক শান্তি প্রস্তাব দিয়েছেন। কম্বোডিয়া তা সমর্থন করলেও থাইল্যান্ড এখনো কেবল নীতিগতভাবে একমত হয়েছে।
থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যে ৮১৭ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্ত নিয়ে বহু পুরনো বিরোধ রয়েছে। এর কেন্দ্রে রয়েছে ১১শ শতাব্দীর ঐতিহাসিক প্রেয়াহ ভিহেয়ার মন্দির। ১৯৬২ সালে আন্তর্জাতিক আদালতের রায়ে মন্দিরটি কম্বোডিয়ার অংশ হিসেবে নির্ধারিত হলেও ২০০৮ সালে ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্য তালিকায় অন্তর্ভুক্তির উদ্যোগ নতুন করে উত্তেজনার সৃষ্টি করে। বর্তমানে কম্বোডিয়া আবারও আদালতের শরণাপন্ন হয়েছে, তবে থাইল্যান্ড বলছে, এই সমস্যার সমাধান হওয়া উচিত দ্বিপাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমে।
সংঘর্ষের মধ্যে ট্রাম্পের হস্তক্ষেপ পরিস্থিতিকে শান্ত করার নতুন সুযোগ তৈরি করেছে—এমনটাই আশাবাদী আন্তর্জাতিক মহল।