নিউইয়র্কে বন্দুকধারীর হামলায় বাংলাদেশি পুলিশ কর্মকর্তা দিদারুলসহ নিহত ৪
নিউইয়র্ক, যুক্তরাষ্ট্র – নিউইয়র্ক শহরের পার্ক অ্যাভিনিউ এলাকার একটি বহুতল ভবনে বন্দুকধারীর গুলিতে চারজন নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে রয়েছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত নিউইয়র্ক পুলিশ বিভাগের কর্মকর্তা দিদারুল ইসলাম (৩৬)। স্থানীয় সময় সোমবার (২৮ জুলাই) সন্ধ্যায় এই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে।
নিউইয়র্ক পুলিশ বিভাগ (NYPD) জানিয়েছে, নিহত দিদারুল ইসলাম ব্রঙ্কসের ৪৭ নম্বর প্রিসিংক্টে কর্মরত ছিলেন। ঘটনার সময় তিনি অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছিলেন ভবনটির নিরাপত্তার কাজে। মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়ার সন্তান দিদারুল নিউইয়র্ক পুলিশে যোগ দেওয়ার আগে ট্রাফিক এনফোর্সমেন্ট বিভাগে কর্মরত ছিলেন। তার স্ত্রী সন্তানসম্ভবা এবং তাদের রয়েছে দুইটি ছোট সন্তান।
পুলিশের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, হামলাকারী ২৭ বছর বয়সী শেন তামুরা, লাস ভেগাসের বাসিন্দা। মানসিক সমস্যার ইতিহাস রয়েছে তার। নিরাপত্তা ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায়, তামুরা একটি বিএমডব্লিউ গাড়ি থেকে বের হয়ে এম৪ রাইফেল হাতে ভবনের দিকে এগিয়ে যান। তিনি প্রবেশ করেই পুলিশ কর্মকর্তা দিদারুলকে গুলি করেন এবং এক নারীকে লক্ষ্য করে গুলি চালান। এরপর ভবনের লবিতে এলোপাতাড়ি গুলি করতে থাকেন।
হামলাকারী পরে ভবনের ৩৩ তলায় উঠে একটি রিয়েল এস্টেট প্রতিষ্ঠানের অফিসে গুলি চালিয়ে আরও একজনকে হত্যা করে এবং শেষে নিজেই আত্মহত্যা করে। এ ঘটনায় আরও একজন গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন বলে জানিয়েছেন নিউইয়র্ক সিটির মেয়র এরিক অ্যাডামস।
ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ একটি রাইফেল কেস, রিভলভার, বেশ কিছু গুলি ও ম্যাগাজিন উদ্ধার করেছে। ঘটনার সময় ভবনটিতে দেশের শীর্ষ আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও ন্যাশনাল ফুটবল লিগের (NFL) অফিস ছিল। নিউইয়র্ক ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা সন্ধ্যা ৬টা ৩০ মিনিটে ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধার অভিযান শুরু করে।
এ ঘটনায় নিউইয়র্কের বাংলাদেশি কমিউনিটিতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। বাংলাদেশি আমেরিকান পুলিশ অফিসার অ্যাসোসিয়েশন (বাপা) এক বিবৃতিতে দিদারুল ইসলামের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছে এবং তার পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর অঙ্গীকার জানিয়েছে।
বাংলাদেশ সোসাইটির সভাপতি আতাউর রহমান সেলিম, সেক্রেটারি মোহাম্মদ আলী, আমেরিকা-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রেসিডেন্ট হাসানুজ্জামান হাসান, ডেমক্র্যাটিক পার্টির ডিস্ট্রিক্ট লিডার ড. দীলিপ নাথ এবং অ্যাটর্নি মঈন চৌধুরী পৃথক বিবৃতিতে দিদারুলকে ‘কমিউনিটির সাহস ও সম্মানের প্রতীক’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
নিহত দিদারুল ইসলামের প্রতি সম্মান জানিয়ে নিউইয়র্ক পুলিশ বিভাগে কর্মরত শতাধিক বাংলাদেশি কর্মকর্তার মাঝে শোক ও উদ্বেগ বিরাজ করছে। অনেকেই তাদের কর্মপরিবেশের নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলেছেন।