কম্বোডিয়ার যুদ্ধবিরতির আহ্বান, থাইল্যান্ডের নীরবতা – সীমান্তে উত্তেজনা চরমে
থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার সীমান্তে চলমান সংঘর্ষের মধ্যেই শান্তির পথে উদ্যোগ নিয়েছে কম্বোডিয়া। জাতিসংঘে নিযুক্ত দেশটির রাষ্ট্রদূত চিয়া কিও শনিবার জানিয়েছেন, তারা “শর্তহীন” যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছে এবং আলোচনার মাধ্যমে সংকটের শান্তিপূর্ণ সমাধান চায়।
তবে এখন পর্যন্ত থাইল্যান্ড সরকারের পক্ষ থেকে এ আহ্বানে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি। বরং থাই সরকার সংঘর্ষপ্রবণ সীমান্তবর্তী আটটি জেলায় মার্শাল ল’ বা সামরিক শাসন জারি করেছে এবং তৃতীয় পক্ষের মধ্যস্থতার প্রস্তাব স্পষ্টভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে।
সংঘর্ষে নিহত ৩২, বাস্তুচ্যুত প্রায় ২ লাখ
চলমান সহিংসতায় এ পর্যন্ত দুই দেশের মোট ৩২ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে থাইল্যান্ডে ১৩ জন বেসামরিক নাগরিক ও ৬ জন সেনা, এবং কম্বোডিয়ায় ৮ জন বেসামরিক নাগরিক ও ৫ জন সেনা রয়েছেন।
স্থানীয় কর্মকর্তাদের বরাতে জানা গেছে, থাইল্যান্ডের ভেতরে প্রায় ১ লাখ ৪০ হাজার এবং কম্বোডিয়ায় ৩৫ হাজারের বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে সরে গেছেন। থাই সেনাবাহিনী জানিয়েছে, সংঘর্ষ সীমান্তের ১২টি এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে, এবং কম্বোডিয়ার বাহিনী দক্ষিণাঞ্চলের উপকূলীয় নতুন এলাকাতেও হামলা চালিয়েছে। তবে থাই নৌবাহিনী তা প্রতিহত করেছে বলে দাবি করেছে।
দুই দেশের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ
কম্বোডিয়া অভিযোগ করেছে, থাইল্যান্ড ক্লাস্টার বোমা ব্যবহার করছে, যা আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী নিষিদ্ধ। এই বোমার ব্যবহার বেসামরিক জনগণের জন্য মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ। যদিও থাইল্যান্ড এখনো এ বিষয়ে কোনো জবাব দেয়নি।
অন্যদিকে, থাইল্যান্ডের দাবি, কম্বোডিয়ার সেনারা সীমান্ত এলাকায় ড্রোনের মাধ্যমে নজরদারি চালাচ্ছিল, যা সংঘর্ষের সূত্রপাত ঘটায়। কম্বোডিয়ার পাল্টা অভিযোগ, থাই সেনারা একটি খেমার-হিন্দু মন্দির এলাকা দখলের চেষ্টা করে আগের চুক্তি ভঙ্গ করেছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, দুই দেশের এই সীমান্ত বিরোধ শত বছরের পুরনো, যার শিকড় ফরাসি উপনিবেশ-পরবর্তী সীমানা নির্ধারণে। আগেও বিভিন্ন সময়ে সংঘর্ষে বহু সেনা ও বেসামরিক নাগরিক হতাহত হয়েছেন।
আন্তর্জাতিক মহলের উদ্বেগ
এদিকে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম, যিনি বর্তমানে আসিয়ান (ASEAN)-এর চেয়ারম্যান, দুই দেশের মধ্যে আলোচনা আয়োজনের প্রস্তাব দিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রও তাৎক্ষণিক সংঘর্ষ বন্ধ, বেসামরিক জনগণের সুরক্ষা এবং শান্তিপূর্ণ সমাধানের আহ্বান জানিয়েছে।
তবে থাইল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রী স্পষ্ট করেছেন, “এই সংঘাতে কোনো তৃতীয় পক্ষের মধ্যস্থতা প্রয়োজন নেই।” থাইল্যান্ডের ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী ফুমথাম ওয়েচায়াচাই সতর্ক করেছেন, “সংঘর্ষ পুরোপুরি যুদ্ধে রূপ নিতে পারে।” তিনি জানান, বর্তমানে ভারী অস্ত্র ব্যবহার করা হচ্ছে এবং সেনাবাহিনী বেসামরিক এলাকাগুলো থেকে লোকজন সরিয়ে নিচ্ছে।
সংকট সমাধানে জাতিসংঘের নীরবতা
সংঘর্ষ পরিস্থিতি নিয়ে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ (UNSC)-এ জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হলেও কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেওয়া হয়নি। কূটনীতিকদের সূত্রে জানা গেছে, পরিষদের সদস্যরা উভয় পক্ষকে যুদ্ধবিরতি বজায় রাখা, সংযম প্রদর্শন এবং আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের আহ্বান জানিয়েছেন।