সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হক আটক
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) হাতে আটক হয়েছেন দেশের সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক। আজ বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে রাজধানীর ধানমন্ডির একটি বাসা থেকে তাকে আটক করা হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ডিবি যুগ্ম কমিশনার মো. নাসিরুল ইসলাম।
তিনি জানান, খায়রুল হককে মিন্টো রোডে অবস্থিত ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তার বিরুদ্ধে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এবং নারায়ণগঞ্জে দায়ের করা তিনটি মামলার মধ্যে যেকোনো একটিতে তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হবে।
কে এই খায়রুল হক?
২০১০ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর দেশের ১৯তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে শপথ নেন খায়রুল হক। ২০১১ সালের ১৭ মে, ৬৭ বছর পূর্ণ হলে তিনি অবসর গ্রহণ করেন। তবে এখানেই থেমে থাকেননি। পরে আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ সময়ে তিনি আইন কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ পান।
গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র ও সাধারণ মানুষের অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের পতনের পর ১৩ আগস্ট খায়রুল হক আইন কমিশনের পদ থেকে পদত্যাগ করেন। এরপর থেকে তিনি প্রকাশ্যে আর দেখা দেননি।
বিতর্কিত সিদ্ধান্ত ও অভিযোগ
খায়রুল হকের বিরুদ্ধে রয়েছে একাধিক রাজনৈতিক ও পেশাগত বিতর্কের অভিযোগ। প্রধান বিচারপতি হওয়ার সময় তিনি কয়েকজন জ্যেষ্ঠ বিচারপতিকে অগ্রাহ্য করে পদোন্নতি পান। তার সবচেয়ে আলোচিত সিদ্ধান্ত ছিল ত্রয়োদশ সংশোধনী মামলার রায়ের মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল, যা দেশের রাজনৈতিক ভারসাম্য নষ্ট করার অন্যতম একটি ঘটনা হিসেবে ইতিহাসে বিবেচিত হয়।
এ ছাড়া—
-
তিনি আদালতের রায়ে ঘোষণা করেন শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষক নন।
-
বিতর্কিতভাবে একাধিক বিচারপতিকে শপথ পড়ান।
-
আগাম জামিনের এখতিয়ার বাতিল করেন।
-
খালেদা জিয়াকে ক্যান্টনমেন্টের বাড়ি থেকে উচ্ছেদে ভূমিকা রাখেন।
-
তার বিরুদ্ধে রয়েছে ক্ষমতার অপব্যবহার, বিচার বিভাগকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহারসহ নানা অভিযোগ।
আজকের এই আটকাদেশ অনেকের কাছে তাই রাজনৈতিক ও বিচারিক জবাবদিহির একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে দেখা হচ্ছে।
বর্তমানে তদন্তের আওতায় থাকা মামলাগুলো কীভাবে পরিচালিত হয় এবং খায়রুল হকের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগগুলো কতটা প্রমাণিত হয়, সেটাই এখন দেখার বিষয়।