২০ বছর কোমায় থাকার পর মারা গেলেন সৌদির ‘ঘুমন্ত রাজপুত্র’
সৌদি আরবের রাজপরিবারের সদস্য প্রিন্স আল ওয়ালিদ বিন খালেদ বিন তালাল আল সৌদ, যিনি দুই দশকেরও বেশি সময় কোমায় থাকার কারণে ‘দ্য স্লিপিং প্রিন্স’ নামে পরিচিত ছিলেন, অবশেষে ইহলোক ত্যাগ করেছেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৩৬ বছর। দীর্ঘ ২০ বছর ধরে চিকিৎসাধীন থাকার পর ২০২৫ সালের ১৯ জুলাই, শনিবার, রিয়াদের কিং আব্দুল আজিজ মেডিকেল সিটি হাসপাতালে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) তার মৃত্যু হয়। সৌদি গেজেট তার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করে এবং তার বাবা প্রিন্স খালেদ বিন তালাল ব্যক্তিগতভাবে এই শোকসংবাদ ঘোষণা করেন।
প্রিন্স আল ওয়ালিদের জীবনবৃত্তান্ত বেদনাদায়ক হলেও সাহস ও প্রত্যয়ের এক অনন্য নিদর্শন হয়ে উঠেছে। ২০০৫ সালে যুক্তরাজ্যে পড়াশোনাকালীন সময় ভয়াবহ এক সড়ক দুর্ঘটনায় তিনি মারাত্মকভাবে আহত হন। দুর্ঘটনার পর থেকেই তিনি কোমায় চলে যান এবং কখনোই সম্পূর্ণ জ্ঞান ফিরে পাননি। কখনো কখনো তার শরীরে সামান্য কিছু প্রতিক্রিয়া দেখা গেলেও, চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় তার অবস্থাকে ‘পারসিস্টেন্ট ভেজেটেটিভ স্টেট’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল।
এই দীর্ঘ সময় ধরে প্রিন্স আল ওয়ালিদ নিবিড় পর্যবেক্ষণ ও যত্নের মধ্যে ছিলেন। তার পরিবারের সদস্যরা, বিশেষ করে তার বাবা প্রিন্স খালেদ, সবসময় ছেলের পাশে থেকেছেন এবং কখনোই লাইফ সাপোর্ট সরিয়ে নেওয়ার পক্ষে যাননি। তিনি বারবার বলেছেন, “জীবন-মৃত্যু একমাত্র আল্লাহর হাতে।” তার এই ধর্মীয় আস্থা এবং পিতৃস্নেহের উদাহরণ বহু মানুষকে নাড়া দিয়েছে।
‘ঘুমন্ত রাজপুত্র’ নামটি শুধু সৌদি আরবেই নয়, সারা বিশ্বের অসংখ্য মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছিল। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বহু মানুষ নিয়মিত তার অবস্থার খোঁজখবর নিতেন এবং প্রার্থনায় অংশ নিতেন। তার জন্য এক ধরনের বিশ্বব্যাপী সহানুভূতির পরিবেশ তৈরি হয়েছিল। অনেকেই এই দীর্ঘ লড়াইকে এক অলৌকিক ধৈর্যের প্রতীক হিসেবে দেখেছেন।
প্রিন্স আল ওয়ালিদের জানাজা অনুষ্ঠিত হবে রোববার (২০ জুলাই) আসরের নামাজের পর, রিয়াদের ঐতিহাসিক ইমাম তুর্কি বিন আবদুল্লাহ মসজিদে। সেখানে রাজপরিবারের সদস্য, শোকসন্তপ্ত স্বজন, বন্ধু-বান্ধব এবং দেশ-বিদেশের গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত থাকবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
তার এই দীর্ঘ কোমাজীবনের পরিসমাপ্তি বহু হৃদয়ে এক অপূরণীয় শূন্যতা তৈরি করেছে। পরিবারের পাশাপাশি সৌদি আরবসহ সারা বিশ্বের বহু মানুষ আজ শোকাহত। তার জীবনের এই করুণ অথচ অনন্য অধ্যায় ভবিষ্যতেও মানুষের মনে স্মরণীয় হয়ে থাকবে—একজন পিতার অটুট বিশ্বাস, এক রাজপুত্রের নিঃশব্দ সংগ্রাম এবং এক জাতির সহানুভূতির ইতিহাস হিসেবে।