বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) ক্রিকেটারদের চোট কমানো এবং পারফরম্যান্স ও টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ আরও গভীরভাবে করার জন্য বায়োমেকানিকস ল্যাব স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পূর্বাচলের ন্যাশনাল ক্রিকেট স্টেডিয়ামে এই ল্যাব তৈরির জন্য ১০ কোটি টাকার বেশি বাজেট রাখা হয়েছে।
বিসিবির গেম ডেভেলপমেন্ট বিভাগের প্রধান ফাহিম সিনহা জানিয়েছেন, ল্যাব স্থাপনের জন্য ইতোমধ্যে পরামর্শক খোঁজার কাজ শুরু হয়েছে। যেহেতু দেশে এ ধরনের ল্যাব পরিচালনার প্রযুক্তিগত দক্ষতা কম, তাই ভারত বা পাকিস্তান থেকে বিশেষজ্ঞ নিয়ে আসার পরিকল্পনা রয়েছে। প্রাথমিকভাবে বিদেশি টেকনিশিয়ানদের মাধ্যমে ল্যাবটি চালু করা হবে এবং পাশাপাশি স্থানীয় কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।
ফাহিম সিনহার ভাষ্য, একটি মানসম্পন্ন বায়োমেকানিকস ল্যাব স্থাপনে প্রায় ১০ কোটি টাকার বেশি খরচ হবে, তবে বৃহৎ পরিসরে এই খরচ ১৫ থেকে ২০ কোটি টাকা পর্যন্ত হতে পারে। বিসিবির পরিকল্পনা প্রথমে ছোট পরিসরে ল্যাব চালু করে ধীরে ধীরে প্রযুক্তিগত সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করার।
ল্যাব থেকে ক্রিকেটারদের ব্যাট সুইং, বোলিং অ্যাকশন, পায়ের ভারসাম্য, পেশির শক্তি ও চোটের ঝুঁকি বিশ্লেষণসহ ব্যাট, বল, গ্লাভস বা জুতার সঠিক ব্যবহার সম্পর্কিত তথ্য পাওয়া যাবে। এই বিশ্লেষণের মাধ্যমে কোচরা সমস্যার সমাধান সহজে করতে পারবেন এবং বোলারদের বোলিং অ্যাকশনের পরীক্ষা করার জন্য বিদেশে যেতে হবে না।
ফাহিম সিনহা বলেন, “খেলাধুলায় বায়োমেকানিকস বা স্পোর্টস সায়েন্সের বিকল্প নেই। বিশ্বের প্রতিটি দেশের নিজস্ব বায়োমেকানিকস ল্যাব রয়েছে। ভারতে ১১টি ল্যাব আছে। আধুনিক ক্রিকেটে পরিবর্তনগুলো গবেষণার মাধ্যমে ল্যাবে নির্ধারিত হচ্ছে।”
জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের পরামর্শে বিসিবি প্রথমে বিকেএসপির বায়োমেকানিকস ল্যাব ব্যবহারের পরিকল্পনা করেছিল। তবে সেখানে দীর্ঘদিন ব্যবহার না হওয়ায় ল্যাবটি অনেকটাই অকেজো হয়ে পড়েছে। বিকেএসপির মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মুনীরুল ইসলাম জানান, সফটওয়্যার আপডেটের কাজ চলছে এবং আপাতত কিছু ক্ষেত্রে ল্যাবটি ব্যবহার করা হচ্ছে।
দেশে বায়োমেকানিকস ল্যাব থাকলে স্থানীয় ফিজিও ও ট্রেনারদের কাজ সহজ হবে এবং খেলোয়াড়রা উপকৃত হবেন। বিসিবির মেডিকেল বিভাগের প্রধান দেবাশীষ চৌধুরী বলেন, “বিশ্বের সফল ক্রীড়া দেশগুলোতে বায়োমেকানিকস ও স্পোর্টস সায়েন্সের ব্যবহার থাকে। এর মাধ্যমে খেলোয়াড়দের দক্ষতা বাড়ে ও চোটের ঝুঁকি কমে। তবে প্রযুক্তিগত দক্ষতা ও বিশ্লেষণের মান কতটা তা গুরুত্বপূর্ণ।”
বিসিবি স্থানীয় কোচদেরও বায়োমেকানিকস বিষয়ে ভালো ধারণা দিতে চায়, কারণ ল্যাবে খেলোয়াড়দের নিয়ে সমস্যা সমাধান করাই তাঁদের কাজ হবে। ল্যাব স্থাপনের বিষয়ে বিসিবির সভাপতি আমিনুল ইসলামও আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। ফাহিম সিনহা জানান, ‘পুরো বোর্ড ইতিবাচক। বুলবুল ভাই স্পোর্টস সায়েন্স নিয়ে কাজ করেছেন, তাই তাঁরও এ বিষয়ে বাড়তি আগ্রহ আছে।’
যদিও এখনও ল্যাব স্থাপনের কাজ কবে শুরু হবে তা নিশ্চিত নয়। অক্টোবর মাসে বিসিবির নির্বাচন হওয়ার কারণে তার আগে কাজ শুরু হওয়ার সম্ভাবনা কম। তবে ফাহিম সিনহা জানিয়েছেন, তারা পরবর্তী পরিচালনা পর্ষদের জন্য একটি কর্মপরিকল্পনা রেখে যেতে চান।