
‘সরকারি মাল দরিয়া মে ঢাল’—এই প্রবচনের প্রতিফলন আজ বিশ্বজুড়ে স্পষ্ট। দুঃখজনক হলেও সত্য, বাংলাদেশও এ প্রবণতার বাইরে নয়। সমাজের নানা স্তরের কিছু অসাধু ব্যক্তি ও গোষ্ঠী সরকারি সম্পদ আত্মসাৎ, জবরদখল ও লুটপাটে প্রতিযোগিতায় নেমেছে। ধনী-গরিব, ক্ষমতাবান-অসহায়—সবার মধ্যেই ছড়িয়ে পড়েছে এই অনৈতিক দৌরাত্ম্য। কখনো ভোলাগঞ্জে পাথর লুট, কখনো কক্সবাজারে বালু হরণ, চাঁদপুরে ইলিশ গায়েব, আবার কোথাও অস্ত্রাগারের গোলাবারুদ বা বাজেটে দুর্নীতি—সব মিলিয়ে এক ভয়াবহ চিত্র।
রাষ্ট্রীয় সম্পদ আসলে জনগণের পবিত্র আমানত। ইসলাম এ বিষয়ে কঠোর অবস্থান নিয়েছে। ব্যক্তিগত সম্পদ হরণ যেমন মহাপাপ, তেমনি সরকারি মাল আত্মসাৎ আরও ভয়াবহ অপরাধ। ব্যক্তিগত সম্পদ হরণে মালিক নির্দিষ্ট থাকায় ক্ষমা চাওয়া সম্ভব হলেও রাষ্ট্রীয় সম্পদের মালিক পুরো জাতি। তাই এ অপরাধ থেকে মুক্তি পাওয়া প্রায় অসম্ভব।
হজরত ওমর (রা.) বলেছিলেন, “রাষ্ট্রীয় সম্পদে কেউ কারও চেয়ে বেশি অধিকারী নয়। আমিও নই।” (আল ফাতহুর রাব্বানি-৮৭)। রসুলুল্লাহ (সা.)-ও গনিমতের মাল আত্মসাৎকারীর কঠিন শাস্তির উদাহরণ দিয়ে সতর্ক করেছিলেন। এমনকি একটি চাদর কিংবা জুতার ফিতার মতো সামান্য জিনিস আত্মসাৎকেও তিনি ‘আগুনের অংশ’ বলেছেন। (সহিহ বুখারি)।
আল্লাহতায়ালা কোরআনে ঘোষণা করেছেন:
“কেউ গোপনে কিছু আত্মসাৎ করলে, সে কেয়ামতের দিন তা নিয়েই হাজির হবে।” (আলে ইমরান: ১৬১)
এবং, “তোমরা একে অপরের সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করো না।” (নিসা: ২৯)
১৯৮০-এর দশকে আল্লামা সিরাজুল ইসলাম খান ছাত্রদের উপদেশ দিয়েছিলেন, টিকিট ছাড়া ট্রেনে ভ্রমণ না করতে। কারণ, রেলভাড়া ফাঁকি দেওয়া সরকারি অর্থ আত্মসাতের শামিল, যা গোটা জাতির সঙ্গে প্রতারণা।
অতএব, সরকারি কর্মকর্তা, কর্মচারী বা যেকোনো দায়িত্বশীল ব্যক্তিকে স্মরণ রাখতে হবে—প্রত্যেকে একজন রাখাল, এবং তার দায়িত্ব সম্পর্কে আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করতেই হবে। রাষ্ট্রীয় সম্পদের সুরক্ষা কেবল আইনি নয়, বরং প্রতিটি মুমিনের ইমানি দায়িত্ব।