মালয়েশিয়ায় জনঅসন্তোষ চরমে, প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবিতে বিক্ষোভে হাজারো মানুষ
কুয়ালালামপুর, ১৩ জুলাই:
জীবনযাত্রার ব্যয়বৃদ্ধি ও প্রতিশ্রুত সংস্কার বাস্তবায়নে ব্যর্থতার অভিযোগে মালয়েশিয়ায় বাড়ছে জনঅসন্তোষ। শনিবার (১৩ জুলাই) রাজধানী কুয়ালালামপুরে প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমের পদত্যাগের দাবিতে বিশাল বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়। বিক্ষোভে অংশ নেয় হাজারো মানুষ।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রাজধানীর কেন্দ্রে অবস্থিত ‘মারদেকা স্কয়ার’ ঘিরে কালো পোশাক পরা বিক্ষোভকারীদের স্লোগানে মুখর হয়ে ওঠে এলাকা। ‘তুরুন আনোয়ার’ (আনোয়ার পদত্যাগ করো) স্লোগান দিতে দিতে তারা বিক্ষোভস্থলে পৌঁছান। পুলিশ ধারণা করছে, অন্তত ১৮ হাজার মানুষ এ বিক্ষোভে অংশ নেয়।
বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ
বিক্ষোভকারীদের দাবি, আনোয়ার ইব্রাহিম ক্ষমতা গ্রহণের আগে যেসব সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তা পূরণে সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ হয়েছেন। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, দুর্নীতি দমন ও সাধারণ মানুষের জীবনমান উন্নয়নের ক্ষেত্রে সরকারের অগ্রগতি নেই বলেও অভিযোগ করেন তারা।
চাপের মুখে সরকার
অর্থনীতিবিদ ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই গণবিক্ষোভ আনোয়ারের সরকারের জন্য বড় ধরনের রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করতে পারে।
২০২২ সালের নভেম্বরে প্রধানমন্ত্রী পদে অধিষ্ঠিত হন আনোয়ার ইব্রাহিম। তখন নিজেকে সংস্কারপন্থী হিসেবে উপস্থাপন করলেও সাম্প্রতিক নীতিমালা নিয়ে তিনি সমালোচনার মুখে পড়েছেন। বিক্রয় ও সেবা কর বৃদ্ধির পাশাপাশি ভর্তুকি হ্রাসের সিদ্ধান্তে ভোক্তা পর্যায়ে ব্যয়বৃদ্ধির শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
প্রতিশ্রুতি দিয়েছে সরকার
বর্ধিত জনরোষ সামাল দিতে আনোয়ারের সরকার বেশ কিছু আর্থিক সহায়তার ঘোষণা দিয়েছে। চলতি সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী জানান, দেশের ১৮ বছর বা তদূর্ধ্ব নাগরিকদের এককালীন ১০০ রিঙ্গিত সহায়তা প্রদান করা হবে। আগামী ৩১ আগস্ট থেকে এই অর্থ বিতরণ শুরু হবে। এ খাতে ২০২৫ সালে সরকার ব্যয় করবে ১,৫০০ কোটি রিঙ্গিত, যা আগের তুলনায় ২০০ কোটি রিঙ্গিত বেশি।
তরুণদের উদ্বেগ
বিক্ষোভে অংশ নেওয়া ২৩ বছর বয়সী নুর শাহিরাহ লেমান জানান, নতুন কর ও উচ্চ শুল্কের বোঝা শেষমেশ ভোক্তাদের ওপরই চাপিয়ে দেওয়া হবে। তিনি বলেন, “এই কর মূলত কোম্পানির ওপর চাপানো হলেও, সেটি শেষ পর্যন্ত ভোক্তাদের পকেট থেকেই আদায় করা হয়। ফলে বাজারে দ্রব্যমূল্য বেড়ে যায়।”
মাহাথিরের যোগদান
এদিকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ বিক্ষোভে উপস্থিত হয়ে আনোয়ার ইব্রাহিমের বিরুদ্ধে পদমর্যাদার অপব্যবহারের অভিযোগ তোলেন।
বিশ্লেষকদের ধারণা, জনগণের ক্রমবর্ধমান অসন্তোষ ও বিরোধী রাজনীতিকদের তৎপরতা মালয়েশিয়ার রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার ওপর প্রভাব ফেলতে পারে।