পরবর্তী শান্তি আলোচনার জন্য রাশিয়ার কাছে প্রস্তাব পাঠিয়েছেন জেলেনস্কি
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি রাশিয়ার সঙ্গে চলমান যুদ্ধের সমাপ্তি এবং শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে নতুন করে আলোচনার উদ্যোগ নিয়েছেন। শনিবার সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে দেওয়া এক ভাষণে তিনি জানান, ইউক্রেন সরকার মস্কোর কাছে পরবর্তী শান্তি আলোচনার জন্য আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব পাঠিয়েছে। তিনি বলেন, “আমরা যুদ্ধবিরতির আলোচনাকে আরও গতিশীল করতে চাই এবং শান্তি প্রতিষ্ঠায় প্রয়োজনীয় সবধরনের পদক্ষেপ নিতে আমরা প্রস্তুত।”
জেলেনস্কি আরও জানান, ইউক্রেনের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন রুস্তেম উমেরভ, যিনি সম্প্রতি ইউক্রেনের জাতীয় নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা কাউন্সিলের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। তিনিই রাশিয়ার কাছে নতুন আলোচনার প্রস্তাব পাঠিয়েছেন। যদিও সম্ভাব্য বৈঠকের সময়, স্থান বা আলোচ্য বিষয় সম্পর্কে কোনো বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করা হয়নি।
গত পাঁচ মাসে তুরস্কের ইস্তাম্বুলে ইউক্রেন ও রাশিয়ার প্রতিনিধিদের মধ্যে দুবার বৈঠক হয়েছে। এসব বৈঠক মূলত যুদ্ধবন্দি বিনিময় এবং মানবিক সহায়তা নিয়ে হলেও, দীর্ঘদিন ধরে চলা যুদ্ধ থামানোর বিষয়ে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। জেলেনস্কি তার ভাষণে বলেন, “যুদ্ধবিরতির জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে রাশিয়াকে। তারা সিদ্ধান্ত গ্রহণে গড়িমসি করা এবং সংঘাত দীর্ঘায়িত করার কৌশল বন্ধ করুক।”
বর্তমানে ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের দোনেৎস্ক অঞ্চলে রুশ বাহিনী অব্যাহত হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। অঞ্চলটিকে কৌশলগতভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করে রাশিয়া সেখানে নিজেদের অবস্থান আরও শক্তিশালী করতে চাইছে। যদিও মস্কো একাধিকবার জানিয়েছে যে তারা শান্তি আলোচনায় বসতে প্রস্তুত, কিন্তু কিয়েভ ও তার পশ্চিমা মিত্ররা এই দাবিকে সন্দেহের চোখে দেখছে। তাদের মতে, রাশিয়া এখনো যুদ্ধ থামাতে আন্তরিক নয় এবং বরং নিজের ‘সর্বোচ্চ কৌশলগত লক্ষ্য’ পূরণে মরিয়া হয়ে উঠেছে।
এমন পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক মহল বিশেষত পশ্চিমা দেশগুলোও বিষয়টি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি রাশিয়াকে কড়া হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। তিনি বলেন, চলতি মাসের শুরুতে ইউক্রেনের শহরগুলোতে রুশ বিমান হামলা বেড়ে যাওয়ায় যদি আগামী ৫০ দিনের মধ্যে কোনো শান্তিচুক্তিতে পৌঁছানো না যায়, তাহলে রাশিয়ার ওপর আরও কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে।
এ সবকিছুর মধ্যেই ইউক্রেনের তরফ থেকে নতুন করে আলোচনার প্রস্তাব পাঠানো একটি বড় পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। যদিও যুদ্ধবিরতির পথ এখনো অনেক দূর, তবে কূটনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে একটি স্থায়ী শান্তি চুক্তির দিকে যাত্রা শুরু করার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে কিয়েভ। এখন দেখার বিষয়—মস্কো এই প্রস্তাবের কী ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখায় এবং আলোচনার টেবিলে বসতে সম্মত হয় কি না।