ছক্কার মন্ত্রে বদলাচ্ছে বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি ব্যাটিং
বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি ব্যাটিং ধীরে ধীরে বদলে যাচ্ছে, আর সেই পরিবর্তনের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে ছক্কা মারার সাহস ও দক্ষতা। এই সাহসী ব্যাটিংয়ের সাম্প্রতিক নিদর্শন দেখা গেছে পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম ম্যাচেই, যেখানে পারভেজ হোসেন ইমন দুর্দান্ত এক ইনিংস খেলেছেন। অফ স্টাম্পের বাইরের বলটিতে এক হাতে খেলা শটে ছক্কা মেরে সমর্থকদের চমকে দেন তিনি। ইনিংসে মোট পাঁচটি ছক্কা মেরে মাত্র ৩৯ বলে ৫৬ রানের ইনিংস খেলেন এই বাঁহাতি ব্যাটার, যা তাঁকে ম্যাচসেরা বানায়। সংবাদ সম্মেলনে নিজের প্রিয় ছক্কার কথা জানতে চাইলে তিনি অকপটে বলেন, “এক হাতে মারা ওই ছক্কাটাই সবচেয়ে প্রিয়।”
টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে দ্রুত রান তোলার সবচেয়ে বড় মাধ্যমই হচ্ছে ছক্কা, এবং বাংলাদেশ দলের সাম্প্রতিক ব্যাটিং এই কৌশলকে আরও বেশি গুরুত্ব দিতে শুরু করেছে। ২০০৬ সাল থেকে টি-টোয়েন্টি খেললেও, এক ইনিংসে ১০ বা তার বেশি ছক্কা মারার নজির প্রথম আসে ২০১৮ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে, যেখানে বাংলাদেশ দল মারে ১২টি ছক্কা। এরপর গত কয়েক বছরে এই চিত্র পাল্টাতে শুরু করে। গত দুই বছরে ৭ বারই বাংলাদেশ দল এক ইনিংসে ১০টির বেশি ছক্কা মারতে সক্ষম হয়েছে, যা আগের তুলনায় অনেক বেশি।
২০২৫ সালে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ খেলেছে ১০টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ, তার মধ্যে ৪টি ম্যাচেই ১০-এর বেশি ছক্কা এসেছে। এই ছক্কা-বিপ্লবে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখছেন ওপেনার তানজিদ হাসান ও পারভেজ হোসেন। তানজিদ তাঁর ২৮ ম্যাচের ক্যারিয়ারে মেরেছেন ৩২টি ছক্কা, যা তাঁকে দেশের ছক্কা তালিকায় নবম স্থানে নিয়ে গেছে। অন্যদিকে, মাত্র ১৬ ম্যাচে পারভেজের ছক্কা সংখ্যা ২৪—যা তাঁর ইনিংসের সংখ্যার প্রায় সমান। বাংলাদেশের ইতিহাসে এমন রেকর্ড আর কারও নেই।
সবচেয়ে বেশি ছক্কা মেরেছেন মাহমুদউল্লাহ—১৪১ ম্যাচে ৭৭টি ছক্কা। কিন্তু ছক্কার হার অনুযায়ী তানজিদ-পরভেজরাই এখন আলোচনার কেন্দ্রে। পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথম টি-টোয়েন্টিতে পারভেজের ৫টি ছক্কার সঙ্গে হৃদয় মেরেছেন আরও ২টি। ফলে ২৭ বল হাতে রেখেই ৮ উইকেটের সহজ জয় তুলে নেয় বাংলাদেশ।
পারভেজ স্পষ্ট করে বলেছেন, ছক্কা মারার এই কৌশল ব্যক্তিগত নয়, বরং সারা দলেরই একটি মনোভাব হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিনি বলেন, “টি-টোয়েন্টি খেলতে হলে ছক্কা মারার সামর্থ্য থাকতেই হবে। আল্লাহর রহমতে আমাদের দলে সবার সে সামর্থ্যটা আছে।” পারভেজের মতে, দলের শেষ ব্যাটসম্যানও এখন ছক্কা মারতে পারেন, যা দলের ব্যাটিং গভীরতা ও আগ্রাসী মনোভাবকে বাড়িয়ে দিয়েছে।
এই আক্রমণাত্মক ব্যাটিং স্টাইল ধরে রাখতে পারলে আগামী ২টি টি-টোয়েন্টি, যা আগামীকাল ও ২৪ জুলাই অনুষ্ঠিত হবে, সেগুলোতেও বাংলাদেশ দল নিশ্চয়ই আরও ছক্কার ফুলঝুরি দেখাতে পারবে। ছক্কার এই মন্ত্রে ভর করে বদলে যাচ্ছে বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি ব্যাটিং—আর এই পরিবর্তনেই ভরসা দেখছে সমর্থকেরা।