
দেশের ৬৮টি কারাগারে প্রায় ৭০ হাজার বন্দিকে নৈতিকতা ও মূল্যবোধ শিক্ষা দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়—এ তথ্য জানিয়েছেন ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন।
তিনি জানান, বন্দিদের নৈতিক শিক্ষা প্রদানের জন্য ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগ, ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে নামাজের ব্যবস্থা, নৈতিকতা ভিত্তিক বইপুস্তক ও জায়নামাজ বিতরণসহ নানা কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে। এছাড়া ভিন্ন ধর্মাবলম্বী বন্দিদের জন্যও তাদের নিজস্ব ধর্মচর্চা ও ধর্মগ্রন্থ অধ্যয়নের সুযোগ নিশ্চিত করা হচ্ছে। প্রথম পর্যায়ে বিপুল সংখ্যক ধর্মীয় বই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে হস্তান্তর করা হবে।
সম্প্রতি চট্টগ্রাম ও ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার পরিদর্শনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে উপদেষ্টা বলেন, আগে কারাগারে নৈতিকতা শিক্ষা দেওয়ার কার্যক্রম তেমন ছিল না। বর্তমান সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই বন্দিদের মধ্যে মানবিক মূল্যবোধ জাগ্রত করার উদ্যোগ শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে কেরানীগঞ্জ কারাগারে প্রায় ২,৫০০ বন্দি কুরআন শিক্ষা সম্পন্ন করেছেন।
ড. খালিদ হোসেন বলেন, “বন্দিদের নৈতিকতা ও আদর্শে উজ্জীবিত করতে হবে, যাতে মুক্তির পর তারা সুষ্ঠু জীবনযাপন করতে পারে। এজন্য প্রত্যেকের নিজ নিজ ধর্মীয় শিক্ষার প্রয়োজন।” তিনি জানান, ইসলামি ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে কারাগারে লাইব্রেরি ও ধর্ম শিক্ষা কার্যক্রম চালু রয়েছে এবং শিগগিরই শিক্ষকসংখ্যা আরও বাড়ানো হবে।
তিনি উল্লেখ করেন, কারাগারে সবাই অপরাধী নন—অনেকেই মিথ্যা মামলায় বন্দি। আদালতের রায়ের আগে কাউকে দোষী বলা যায় না। সরকারের লক্ষ্য কারাগারকে প্রকৃত সংশোধনাগারে পরিণত করা।
এছাড়া, এবারের হজ নির্বিঘ্নে সম্পন্ন হয়েছে এবং খরচ সাশ্রয়ের ফলে সরকারি হজযাত্রীরা মোট ৮ কোটি ২০ লাখ টাকা ফেরত পেয়েছেন। প্রধান উপদেষ্টার সহযোগিতায় এ হজ ব্যবস্থাপনা আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসিত হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।
গত এক বছরে ধর্ম মন্ত্রণালয় মসজিদ, মাদ্রাসা ও অন্যান্য উপাসনালয়ে অনুদান প্রদান, হাজারো মক্তবে ধর্মীয় শিক্ষা বিস্তার এবং উল্লেখযোগ্য পরিমাণ ওয়াকফ সম্পত্তি উদ্ধার করেছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে যাকাত ফান্ড থেকে প্রায় ১১ কোটি টাকা অসহায়, দরিদ্র ও অসুস্থদের সহায়তায় দেওয়া হয়েছে। ইমাম মুয়াজ্জিন কল্যাণ ট্রাস্ট থেকেও অনুদান ও সুদমুক্ত ঋণ বিতরণ করা হয়েছে।
হাওর অঞ্চলের জীবনমান উন্নয়ন, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ প্রতিরোধ, মাদকাসক্তি, নারী-শিশু নির্যাতন, মানবপাচার, যৌতুক ও বাল্যবিবাহ রোধে ইমামদের মাধ্যমে সচেতনতামূলক কর্মসূচি চলছে।
এছাড়া, “নৈতিকতা ও ধর্মীয় মূল্যবোধ উন্নয়নে মসজিদভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম” প্রকল্পের আওতায় প্রায় ১ কোটি ৪৫ লাখ শিক্ষার্থীকে কুরআন শিক্ষা, প্রাক-প্রাথমিক ও প্রাপ্তবয়স্ক শিক্ষা প্রদান করা হচ্ছে। একই সঙ্গে ৭৬ হাজারের বেশি ইমাম, মুয়াজ্জিন ও শিক্ষিত নারী-পুরুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। ওয়াকফ এস্টেট ব্যবস্থাপনাকে অটোমেশন প্রক্রিয়ায় আনার কাজও চলছে, যাতে অনলাইনে সেবা দেওয়া ও সম্পত্তি মনিটরিং সহজ হয়।