
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২ (আরপিও) সংশোধন করে ২০২৫ সালের অধ্যাদেশ চূড়ান্ত করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, অনিয়ম হলে ইসি চাইলে একটি সংসদীয় আসনের সব কটি কেন্দ্রের ফল বাতিল করতে পারবে। এমনকি প্রয়োজন মনে করলে ৩০০ আসনের সব কটির ফলাফলও বাতিল করতে পারবে সংস্থাটি।
ফিরিয়ে আনা হয়েছে ‘না’ ভোটের বিধান। কোনো আসনে যদি একজন মাত্র প্রার্থী থাকেন, তাহলে সেখানে ভোটাররা ‘না’ ভোট দিতে পারবেন। ফলে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার সুযোগ কার্যত বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।
ইসি সিদ্ধান্ত নিয়েছে, নির্বাচনে প্রার্থী হলফনামায় মিথ্যা তথ্য দিলে নির্বাচিত ঘোষণার পরও তদন্ত সাপেক্ষে তাঁর সংসদ সদস্য পদ বাতিল করতে পারবে কমিশন। এ ছাড়া আচরণবিধি লঙ্ঘনের ক্ষেত্রেও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার বিধান সংযোজন করা হয়েছে।
নির্বাচন ভবনে গতকাল সোমবার অনুষ্ঠিত নবম কমিশন সভায় এসব সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন। উপস্থিত ছিলেন নির্বাচন কমিশনার আব্দুর রহমানেল মাছউদ, তাহমিদা আহমদ, মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার ও আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ এবং ইসি সচিব আখতার আহমেদসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
এর আগে ৭ আগস্ট দিনভর আলোচনার পর সভা মুলতবি করা হয়েছিল।
সভা শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ। তিনি বলেন, ‘ভোটের ফলাফল বাতিলের ক্ষমতা ইসির হাতে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। এখন থেকে কোনো অনিয়ম হলে একাধিক কেন্দ্র বা পুরো আসনের ফল বাতিল করা যাবে। এমনকি চাইলে সব আসনের ফলও বাতিল করতে পারবে কমিশন।’
তিনি আরো বলেন, ‘হলফনামায় মিথ্যা তথ্য দিলে নির্বাচনের পরে তদন্ত করে সংসদ সদস্য পদ বাতিল করার বিধান যুক্ত করা হয়েছে।
কমিশনার জানান, নির্বাচন আচরণবিধি লঙ্ঘনের ক্ষেত্রেও কমিশন এখন সরাসরি শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে পারবে।
‘না’ ভোটসংক্রান্ত বিষয়ে তিনি বলেন, “২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে প্রথমবার ‘না’ ভোট চালু হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে তা বাতিল করে দেয়। এবার আরপিও সংশোধনের মাধ্যমে ‘না’ ভোট আবারও ফিরিয়ে আনা হচ্ছে। তবে সব আসনে নয়, কেবল একক প্রার্থী থাকলে সে ক্ষেত্রে ‘না’ ভোট থাকবে।”
তিনি আরো বলেন, ‘জোটগত নির্বাচন হলেও প্রতিটি দলকে নিজ নিজ প্রতীকে নির্বাচন করতে হবে। সমভোটের ক্ষেত্রে লটারির বিধান বিলুপ্ত করে পুনঃভোট নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।’
আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সংজ্ঞা পরিবর্তন করে সশস্ত্র বাহিনী (সেনা, নৌ ও কোস্ট গার্ড) অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ফলে প্রয়োজনে তাঁদের নির্বাচনী দায়িত্বে নিয়োগ দেওয়া যাবে।
গণমাধ্যমকর্মীদের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ভোট গণনার সময় গণমাধ্যমকর্মীরা উপস্থিত থাকতে পারবেন। তবে যাঁরা শুরু থেকে গণনায় থাকবেন, তাঁদের শেষ পর্যন্ত পুরো সময় থাকতে হবে। মাঝপথে কেউ বের হয়ে যাওয়া যাবে না।’ তিনি আরো জানান, ‘ইভিএমসংক্রান্ত যাবতীয় বিধান বিলুপ্ত করা হয়েছে।’
নতুন রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের বিষয়ে কমিশনার বলেন, ‘এবার ১৪৩টি দল আবেদন করেছে, এর মধ্যে ৮৪টি দল পূর্ণাঙ্গ নথি জমা দিয়েছে। যাচাই-বাছাই শেষে ২২টি দল সঠিক কাগজপত্র জমা দিয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হওয়া গেছে। এদের বিষয়ে মাঠ পর্যায়ে তদন্ত চলবে।’
সীমানা পুনর্নির্ধারণ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘৮২টি আসনে আপত্তি জমা পড়েছে।’
কোনো দলের নিবন্ধন বাতিল হলে ১৫ দিনের মধ্যে কমিশন সুনির্দিষ্ট কারণ জানাবে।
নারীর মর্যাদা রক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ এবং আচরণবিধিতে সাইবার বুলিং প্রতিরোধে বিশেষ বিধান সংযোজনের কথাও জানান কমিশনার।
ইসি সূত্র জানায়, কমিশনের প্রস্তাবটি চূড়ান্ত অনুমোদনের পর আইন মন্ত্রণালয়ে ভেটিংয়ের জন্য পাঠানো হবে। এরপর উপদেষ্টা পরিষদের অনুমোদন সাপেক্ষে অধ্যাদেশ আকারে এটি জারি করা হবে।