সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত নিরস্ত্রীকরণ নয় হামাসের ঘোষণা
সার্বভৌম ও স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত নিরস্ত্রীকরণে রাজি নয় হামাস—এমন অবস্থান স্পষ্ট করেছে ফিলিস্তিনি এই সশস্ত্র সংগঠন। গাজায় যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ইসরায়েলের অন্যতম প্রধান শর্তের জবাবে হামাস এই ঘোষণা দেয়।
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক দূত স্টিভ উইটকফ সম্প্রতি দাবি করেছিলেন, হামাস অস্ত্র পরিত্যাগে ইচ্ছুক। এই মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় হামাস জানায়, জেরুজালেমকে রাজধানী করে একটি পূর্ণাঙ্গ ও স্বীকৃত ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আগ পর্যন্ত তারা অস্ত্র ত্যাগ করবে না এবং প্রতিরোধের অধিকার থেকে সরে আসবে না।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হামাসের নিরস্ত্রীকরণই ইসরায়েলের প্রধান যুদ্ধবিরতির শর্ত। তবে এ বিষয়ে পরোক্ষ আলোচনা গত সপ্তাহে থমকে গেছে। এর মধ্যে আরব দেশগুলো ও পশ্চিমা কয়েকটি রাষ্ট্র হামাসকে নিরস্ত্রীকরণ এবং গাজার প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ হস্তান্তরের আহ্বান জানিয়েছে। ফ্রান্স ও কানাডাসহ বেশ কিছু দেশ ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার পরিকল্পনার কথাও জানিয়েছে। যুক্তরাজ্য জানিয়েছে, ইসরায়েল নির্দিষ্ট কিছু শর্ত পূরণ না করলে তারাও স্বীকৃতি দেবে।
এদিকে, ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর (আইডিএফ) লেফটেন্যান্ট জেনারেল ইয়াল জামির শুক্রবার হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, হামাসের হাতে থাকা জিম্মিদের মুক্তির আলোচনা ব্যর্থ হলে গাজায় নতুন করে সামরিক অভিযান শুরু হবে। একইদিনে, জিম্মিদের একজন এভিয়াতার ডেভিডের পরিবার অভিযোগ করে, তাকে খাবার না দিয়ে কষ্ট দেওয়া হচ্ছে এবং তারা ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের কাছে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
বর্তমানে ইসরায়েল সফররত স্টিভ উইটকফ শনিবার তেল আবিবে জিম্মিদের পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তিনি বলেন, আংশিক সমাধান নয়, বরং একটি পূর্ণাঙ্গ শান্তিচুক্তি প্রয়োজন এবং সব জিম্মিকে নিরাপদে ফিরিয়ে আনা উচিত। এর আগে তিনি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সাথেও বৈঠক করেন। শুক্রবার তিনি গাজার দক্ষিণাঞ্চলের একটি বিতর্কিত ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্র পরিদর্শন করেন।
জাতিসংঘ জানিয়েছে, মে মাস থেকে এখন পর্যন্ত অন্তত ১,৩৭৩ জন ফিলিস্তিনি ত্রাণ সংগ্রহ করতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন। এদের অধিকাংশই গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ)-এর বিতরণ কেন্দ্রে ইসরায়েলি গুলিতে নিহত হন। ইসরায়েল এসব ঘটনার জন্য হামাসকে দায়ী করে বলেছে, সৈন্যদের লক্ষ্য ছিল না বেসামরিক জনগণ।
প্রসঙ্গত, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাস ইসরায়েল ভূখণ্ডে আক্রমণ চালায়, যেখানে প্রায় ১,২০০ জন নিহত হন এবং ২৫১ জনকে জিম্মি করে গাজায় নিয়ে যাওয়া হয়। এর প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েলি অভিযানে এখন পর্যন্ত গাজায় ৬০ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। গাজা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এদের মধ্যে ৯৩ শিশু ও ১৬৯ জন অপুষ্টির কারণে মারা গেছে।