দ্রুজ জনগোষ্ঠীকে রক্ষার অজুহাতে সিরিয়ার সামরিক সদর দপ্তরে ইসরায়েলের হামলা
সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে অবস্থিত সামরিক সদর দপ্তর, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রেসিডেন্ট প্রাসাদের আশপাশের এলাকায় আজ বুধবার বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) এই হামলার সত্যতা নিশ্চিত করেছে। সিরিয়ার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এতে অন্তত একজন নিহত ও ১৮ জন আহত হয়েছেন।
আইডিএফ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে এক পোস্টে জানায়, তারা দক্ষিণ সিরিয়ায় দ্রুজ জনগণের ওপর সরকারি বাহিনীর দমন-পীড়নের পরিপ্রেক্ষিতে দামেস্কে সামরিক সদর দপ্তরের প্রবেশপথে হামলা চালিয়েছে। পোস্টে আরও বলা হয়, ইসরায়েলি রাজনৈতিক নেতৃত্বের নির্দেশে সেনাবাহিনী এই হামলা পরিচালনা করেছে এবং যেকোনো সম্ভাব্য পরিস্থিতির জন্য তারা প্রস্তুত রয়েছে। হামলার লক্ষ্য ছিল প্রেসিডেন্ট প্রাসাদের কাছাকাছি থাকা সামরিক স্থাপনাগুলো।
মিডল ইস্ট আইয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হামলার সময় উমাইয়াদ চত্বরের কাছে বিশাল বিস্ফোরণের ধোঁয়া ও আগুন দেখা গেছে। সিরিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা সানা জানিয়েছে, এই হামলায় হতাহতের ঘটনা ঘটেছে, তবে বিস্তারিত তথ্য জানানো হয়নি। ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ হামলার ভিডিও প্রকাশ করে এক্সে লেখেন, “তীব্র হামলা শুরু হয়েছে।”
সাম্প্রতিক সময়ে সিরিয়ার দক্ষিণাঞ্চলীয় সুয়েইদা প্রদেশে দ্রুজ সম্প্রদায়ের সঙ্গে সেনাবাহিনীর সংঘর্ষ চলছে। ইসরায়েল দাবি করেছে, তারা দ্রুজ সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা এবং নিজেদের উত্তর সীমান্তে নিরাপত্তা হুমকি প্রতিরোধ করতেই এই হামলা চালিয়েছে।
তুরস্ক এই হামলার কড়া নিন্দা জানিয়ে বলেছে, দীর্ঘ ১৪ বছরের যুদ্ধ শেষে সিরিয়ার পুনর্গঠনের প্রচেষ্টা ইসরায়েল ব্যর্থ করতে চাইছে। তুর্কি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, এখন সিরিয়ার জনগণের শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস এবং আন্তর্জাতিক সমাজে সম্পৃক্ত হওয়ার এক ঐতিহাসিক সুযোগ এসেছে, এবং সব পক্ষের উচিত সরকারের শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টাকে সহযোগিতা করা।
আল-জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বছরের ডিসেম্বরে ইসলামপন্থী গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শাম (HTS)-এর নেতৃত্বে প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের সরকারের পতন ঘটে। এরপর HTS নেতা আহমেদ আল-শারার অন্তর্বর্তী সরকারের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন এবং ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার উদ্যোগ নিচ্ছেন, যুক্তরাষ্ট্র যাকে সমর্থন দিচ্ছে। গত মে মাসে তিনি সৌদি আরবের রিয়াদে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক করেছেন।
উল্লেখ্য, সিরিয়ার দ্রুজ একটি ক্ষুদ্র ধর্মীয় গোষ্ঠী, যাদের ধর্মীয় বিশ্বাস ইসলাম ধর্মের একটি শাখা হিসেবে বিবেচিত। তারা সিরিয়া ছাড়াও লেবানন ও ইসরায়েলেও বসবাস করে। বাশার সরকারের পতনের পর ইসরায়েল ইতিমধ্যে দামেস্কসহ সিরিয়ার ৬০০টির বেশি স্থানে হামলা চালিয়েছে, যার ফলে দেশটির সামরিক সক্ষমতা প্রায় সম্পূর্ণভাবে বিপর্যস্ত হয়েছে। এছাড়া, তারা জাতিসংঘ-নিয়ন্ত্রিত গোলান মালভূমিতে সেনা মোতায়েন করে দক্ষিণ সিরিয়ার গভীরে অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে, যা আগে সিরিয়া ও ইসরায়েলের মধ্যে কৌশলগত নিরাপত্তা সীমা হিসেবে বিবেচিত হতো।