
কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে সিমেন্টবোঝাই একটি লরি উল্টে প্রাইভেটকারের ওপর পড়লে এক পরিবারের চারজন নিহত হন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালকসহ তিনজন। নিহত চারজনই চাপা পড়া ওই গাড়ির যাত্রী ছিলেন। গতকাল শুক্রবার দুপুর সোয়া ১২টার দিকে জেলার সদর দক্ষিণ উপজেলার উত্তর রামপুর পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের সামনের ইউটার্নে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন– কুমিল্লার বরুড়া উপজেলার হোসেনপুর গ্রামের ওমর আলী (৮০), তাঁর স্ত্রী নুরজাহান বেগম (৬৫), তাদের বড় ছেলে ব্যাংক এশিয়ার কর্মকর্তা আবুল হাশেম স্বপন (৫০) এবং ছোট ছেলে আবুল কাশেম মামুন (৪৫)। ঢাকায় বাবার চিকিৎসা শেষে গাড়িতে করে বরুড়ার হোসেনপুর গ্রামের বাড়িতে ফিরছিলেন দুই ছেলে। লরি উল্টে পড়লে তাদের প্রায় ইভেটকার ও পাশে থাকা একটি অটোরিকশা দুমড়েমুচড়ে যায়। প্রাইভেটকারটি চালাচ্ছিলেন আবুল হাসেম। আহতদের নাম জানা যায়নি। তারা বর্তমানে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ঢাকার দিক থেকে প্রাইভেটকারটি চাঁদপুর সড়কে যেতে উত্তর রামপুর পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের সামনে ইউটার্ন করছিল। এ সময় ঢাকাগামী সিমেন্ট বোঝাই লরিটি উল্টোপথে আসা চট্টগ্রামগামী হানিফ পরিবহনের একটি বাসকে সাইড দিতে গিয়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উল্টে যায়। এ সময় লরির নিচে চাপা পড়ে প্রাইভেটকার ও অটোরিকশা। স্থানীয় লোকজন এসে দ্রুত দুমড়েমুচড়ে যাওয়া অটোরিশার ভেতর থেকে আহতদের উদ্ধার করেন। কিন্তু দুমড়েমুচড়ে যাওয়া প্রাইভেটকারের ভেতর থেকে কাউকে বের করতে পারেননি তারা।
ঘটনাস্থলে থাকা স্থানীয় ব্যবসায়ী রমিজ উদ্দিন বলেন, দুর্ঘটনার এক মিনিটের মধ্যেই আমরা অন্তত শতাধিক লোক অনেক চেষ্টা করেও প্রাইভেটকারের ভেতর থেকে কাউকে বের করতে পারিনি। কিছু সময় ভেতর থেকে কান্নার শব্দ শোনা যাচ্ছিল। দুপুর ২টার দিকে হাইওয়ে পুলিশের রেকার ও ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে এসে উদ্ধার অভিযান শুরু করে। পরে গাড়িটির ভেতর থেকে এক পরিবারের চারজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
এবারই ছিল ওমর আলীর শেষ চিকিৎসা
একই পরিবারের চারজন নিহত হওয়ার ঘটনায় বরুড়ার হোসেনপুরে চলছে শোকের মাতম। বিকেলে মরদেহ নিতে হাইওয়ে ময়নামতি থানায় আসেন পরিবারের লোকজন। এ সময় তারা মরদেহ দেখে আহাজারি করতে থাকেন।
জানা গেছে, নিহত ওমর আলী এবং নুরজাহান বেগম হোসেনপুরে গ্রামের বাড়িতেই থাকতেন। মাঝেমধ্যে চিকিৎসার জন্য তারা রাজধানীতে ছেলেমেয়েদের কাছে যেতেন। মাস দুয়েক আগে ওমর আলীর চিকিৎসার জন্য ঢাকায় বড় ছেলে আবুল হাশেমের বাসায় যান। চিকিৎসা শেষে গতকাল তারা গ্রামের বাড়ি ফিরছিলেন।
দুর্ঘটনার খবর পেয়ে নিহত ওমর আলীর বড় মেয়ে হাসিনা আক্তারের স্বামী দেলোয়ার হোসেন ময়নামতি হাইওয়ে থানায় মরদেহ গ্রহণ করতে এসে কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি বলেন, নিহত ওমর আলীর বড় ছেলে আবুল হাসেমের বাসা রাজধানীর কল্যাণপুরে। নিজ ফ্ল্যাটেই থাকতেন স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে। ব্যাংক এশিয়ার মিরপুর রূপনগর শাখার ব্যবস্থাপক ছিলেন। ওমর আলীর নিহত অপর ছেলে আবুল কাশেম মামুন স্ত্রী ও দুই ছেলেসহ থাকতেন রাজধানীর মানিকনগর এলাকার নিজ ফ্ল্যাটে। তিনি একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করতেন। ওমর আলীর বড় মেয়ে হাসিনা আক্তার যমুনা ব্যাংকের ধোলাইখাল শাখায় কর্মরত। ছোট মেয়ে রোকসানা আক্তার ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের শ্যামলী শাখায় কর্মরত। তাদের মরদেহ গ্রামের বাড়িতে দাফনের জন্য নেওয়া হয়েছে।
ময়নামতি হাইওয়ে থানার এসআই আনিসুর রহমান বলেন, হাইওয়ে পুলিশের কাছে থাকা রেকারটি কম ধারণ ক্ষমতার। ফলে উল্টে পড়া সিমেন্টবোঝাই লরি বেশি ওজনের হওয়ায় উদ্ধারকাজ চালাতে বেশি ধারণ ক্ষমতার ক্রেন ভাড়া করে আনতে হয়েছে। এতে উদ্ধারকাজে দেরি হয়। আমরা ঘটনাস্থলে পৌঁছার আগেই গাড়িটির ভেতরে সবাই মারা যান। মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। লরির চালক পলাতক।
এদিকে কুমিল্লায় দুর্ঘটনার কারণে এ দিন দুপুর থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ঢাকামুখী লেনে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস দুর্ঘটনাকবলিত লরি ও প্রাইভেটকার সরিয়ে নেওয়ার পর যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। হাইওয়ে পুলিশের কুমিল্লা অঞ্চলের সুপার খাইরুল আলম বলেন, সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ পদুয়ার বাজার বিশ্বরোড এলাকায় যানজট ও দুর্ঘটনা প্রতিরোধে ইউলুপ তৈরি করছে। কাজ চলমান আছে। তাই বিকল্প উপায়ে মহাসড়কে ঝুঁকিপূর্ণ ইউটার্ন চালু রয়েছে।
এ বিষয়ে সওজ কুমিল্লার নির্বাহী প্রকৌশলী গোলাম মোস্তফা বলেন, ইউলুপ তৈরির কাজ চলমান আছে। এরই মধ্যে কাজ ২৫ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। চলতি বছরের ৩০ জুন কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও বিভিন্ন কারণে ২০২৭ সাল পর্যন্ত সময় লাগবে।
এক মোটরসাইকেলে ৪ জন, উল্টে নিহত ৩
মুন্সীগঞ্জের সিরাজদীখানে ঢাকা-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ের সার্ভিস লেনে মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ছিটকে পড়ে গাড়ির চাপায় তিনজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন মোটরসাইকেলের আরেক আরোহী। গত রাত সোয়া ১১টার দিকে সিরাজদীখান উপজেলার নিমতলার মডার্ন গ্রিন সিটির সামনে সার্ভিস সড়কে এ ঘটনা ঘটে। নিহতদের সবার বাড়ি একই এলাকায়।
নিহতরা হলেন– উপজেলার রশুনিয়া ইউনিয়নের খিলাপাড়া গ্রামের আওলাদ হোসেন (২৩), মোহাম্মদ হাবিব (২৩) এবং আব্দুল কাইয়ুম (২৪)। নিহত হাবিব ও কাইয়ুম চাচাতো ভাই এবং আওলাদ তাদের ভাতিজা।
শ্রীনগরের হাসাড়া হাইওয়ে থানার ওসি আবু নাইম সিদ্দিক জানান, ‘ঢাকাগামী রেজিস্ট্রেশনবিহীন মোটরসাইকেলে চালকসহ চারজন আরোহী ছিলেন। বৃষ্টির কারণে চলন্ত অবস্থায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে তারা এক্সপ্রেসওয়ের সার্ভিস লেনে পড়ে যান। এ সময় বিপরীত দিক থেকে মাওয়াগামী একটি প্রাইভেটকার তাদের চাপা দিলে ঘটনাস্থলেই তিনজন মারা যান। স্থানীয়রা ইমন নামে আহত একজনকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়েছে। নিহতরা সবাই পেশায় টাইলস মিস্ত্রি। বৃহস্পতিবার শ্রীনগরের একটি বাড়িতে টাইলসের কাজ শেষে তারা এক মোটরসাইকেলে বাড়ি ফিরছিলেন।
শ্রীপুরে প্রাণ গেল নারীর
লেগুনাচালক জুয়েল রানার পাশের সিটে বসা ছিলেন স্ত্রী নমিতা রানী। লেগুনার পেছনের সিটে বাসা ছিলেন আরও ১০-১২ যাত্রী। তারা সবাই পোশাক কারখানার শ্রমিক। জুয়েল প্রতিদিনই পোশাক শ্রমিক স্ত্রী নমিতাকে বাসা থেকে সঙ্গে নিয়ে বের হন। গতকালও স্ত্রীকে পাশে বসিয়ে লেগুনা চালাচ্ছিলেন আর গল্প করছিলেন। হঠাৎই লেগুনার নিয়ন্ত্রণ হারান জুয়েল। এ সময় লেগুনাটি রাস্তার পাশে বৈদ্যুতিক খুঁটির সঙ্গে ধাক্কা লেগে দুমড়েমুচড়ে যায়। এতে সামনে বসে থাকা নমিতা ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান। আহত হন জুয়েলসহ অন্তত ১২ জন।
গতকাল ভোর ৫টার দিকে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার তেলিহাটি ইউনিয়নের মাওনা-বরমী সড়কের আনসার টেপিরবাড়ি এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত নমিতা রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার গোপালপুর গ্রামের ললিত চন্দ্রের মেয়ে। বছরখানেক আগে হিন্দু নমিতা প্রথম স্বামীকে ছেড়ে এসে লেগুনাচালক জুয়েল রানাকে বিয়ে করেন। আগের ঘরে নমিতার একটি সন্তানও রয়েছে।
শ্রীপুর থানার ওসি মহম্মদ আব্দুল বারিক জানান, গাজীপুর সদরের ভবানীপুর এলাকার মোশারফ কম্পোজিট টেক্সটাইল মিলস কারখানার শ্রমিকদের মাসিক হিসাবে আনানেওয়া করেন জুয়েল। স্ত্রী নমিতাকে নিয়ে তিনি গাজীপুর সদরের বানিয়ারচালা এলাকায় থাকতেন। গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আহতদের মধ্যে লেগুনাচালক জুয়েলের অবস্থা আশঙ্কাজনক।