
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন শুক্রবার আলাস্কায় মুখোমুখি বৈঠকে বসলেও কোনো সমাধান আসেনি। ট্রাম্প যুদ্ধবিরতির চাপ দিলেও, পুতিন নিজের অবস্থান থেকে নড়েননি। ফলে আলোচনার ফলশ্রুতিতে কোনো চুক্তি হয়নি।
এটি দুই পরাশক্তির জন্য হতাশার হলেও ইউরোপের নেতাদের জন্য ছিল স্বস্তির। বৈঠকের আগে ইউরোপীয় দেশগুলো আশঙ্কা করেছিল, ট্রাম্প হয়তো পুতিনের সঙ্গে এমন চুক্তি করবেন যা ইউক্রেন ও ইউরোপের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা হয়নি।
যুদ্ধবিরতিতে ব্যর্থতা
পুতিন বর্তমানে ইউক্রেনের ২০ শতাংশের বেশি ভূখণ্ড দখলে রেখেছেন। ইউরোপের নেতাদের ভয় ছিল—ট্রাম্প নতি স্বীকার করলে ইউক্রেনকে ভূখণ্ড ছাড়তে চাপ দেওয়া হতে পারে। কিন্তু শুক্রবারের বৈঠক অচলাবস্থাতেই শেষ হয়। নির্ধারিত সময়ের আগেই দুজন আলাস্কা ছেড়ে যান।
ট্রাম্পের মূল লক্ষ্য ছিল যুদ্ধবিরতি, তবে সেটি বাস্তবায়িত হয়নি। যদিও তিনি জানান, ভবিষ্যতে আরও বৈঠকের পথ খুলেছে।
জেলেনস্কির ভূমিকা
আলাস্কা থেকে ফেরার পর ট্রাম্প বলেন, এখন যুদ্ধবিরতির দায়িত্ব ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির ওপর। এদিকে জেলেনস্কি ঘোষণা দিয়েছেন, তিনি ত্রিপক্ষীয় বৈঠকে বসতে চান। সোমবার ওয়াশিংটনে ট্রাম্পের সঙ্গে তাঁর বৈঠকও নির্ধারিত হয়েছে।
ট্রাম্প বলেন, যুদ্ধের অবসান ঘটাতেই তিনি জেলেনস্কির সঙ্গে বসবেন। তবে পুতিনের সঙ্গে বৈঠকে কী আলোচনা হয়েছে, তা প্রকাশ করেননি।
‘ফলপ্রসূ’ দাবি, তবে অস্পষ্টতা রয়ে গেল
ট্রাম্প বৈঠক শেষে জানান, “আমরা অনেক বিষয়ে একমত হয়েছি, তবে কয়েকটি বড় বিষয়ে অগ্রগতি হয়নি। চুক্তি না হওয়া পর্যন্ত আলোচনা চলবে।” পুতিনও জানান, আলোচনা চললে শান্তিচুক্তির পথ তৈরি হবে। তবে কোনো নির্দিষ্ট পরিকল্পনা প্রকাশ করেননি।
বৈঠকের পরও পরিস্থিতি স্পষ্ট হয়নি। সিএনএন জানায়, প্রায় তিন ঘণ্টার আলোচনার পর ট্রাম্প-পুতিন সংবাদ সম্মেলনে এসে কিছু না বলেই চলে যান।
প্রতিক্রিয়া ও বিশ্লেষণ
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বৈঠকটি অনেকটা ট্রাম্পের কিম জং উনের সঙ্গে পূর্বের বৈঠকের মতোই—আলোচনার প্রচারণা থাকলেও ফল কম। বরং একে যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত পুতিনকে বৈধতা দেওয়ার ঝুঁকি হিসেবে দেখছেন অনেকে।
রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন অবশ্য বৈঠককে ‘ঐতিহাসিক করমর্দন’ হিসেবে তুলে ধরে, যা পুতিনের কূটনৈতিক প্রত্যাবর্তনের ইঙ্গিত বলে মনে করছে তারা।
ইউক্রেন ও ইউরোপের অবস্থান
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি জানান, আলোচনায় তাঁকে বাদ দেওয়ায় তারা হতাশ। পরবর্তী বৈঠকে তিন পক্ষকেই থাকতে হবে বলে তিনি দাবি করেন।
অন্যদিকে ইউরোপীয় নেতারা যৌথ বিবৃতিতে বলেন, “ইউক্রেনের সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষায় ইস্পাত কঠিন নিশ্চয়তা থাকতে হবে। রাশিয়া কখনো ইউক্রেনের ন্যাটো বা ইইউ সদস্যপদে ভেটো দিতে পারবে না।”
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার বলেন, “ইউক্রেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গীকারকে স্বাগত জানাই।” ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ জানান, ফ্রান্স সবসময় ইউক্রেনের পাশে থাকবে।